মাত্র দেড় বছরে দেউলিয়া হওয়া থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলংকা?

শ্রীলংকার ঘুরে দাড়ানোর গল্প

মাত্র দেড় বছরে পাল্টে গেলো শ্রীলংকার চেহারা। বাংলাদেশকে শোধ করলো ঋণের পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার। এবং আরো পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। কিভাবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠছে শ্রীলঙ্কা।

কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতির আওতায় দুহাজার একুশ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশের কাছ থেকে এক বছর মেয়াদের জন্য দুইশো বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। গত বছর নেয়া এই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ছিল গত মে মাস পর্যন্ত।

কিন্তু গুরুতর অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট এবং অস্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে দু হাজার বাইশ সালের এপ্রিলে অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া ঘোষণা দেয় শ্রীলঙ্কা। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে নেয়া দুইশো মিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিষধে শ্রীলংকা সময় নেয়। এরই মধ্যে ঋণের এক চতুর্থ অংশ অর্থাৎ পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের খবর এলো।

ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রায় দেউলিয়া হবার জেরে দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা হয়ে ছিল। যার পরিণতিতে শ্রীলঙ্কার সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। দেশ ছাড়তে হয়েছিল দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট  রাজা পাকশী কেও। এই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে শ্রীলংকা।

কারণ জমে উঠতে শুরু করে শ্রীলংকার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি পর্যটন খাত। সেই সাথে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে দেশটির রেমিট্যান্স। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে শিগগিরই দেশটির অর্থনীতি আরো শক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।

আগারের বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটন খাত থেকে শ্রীলংকার আয় বেড়েছে পঁচিশ শতাংশেরও বেশি। আর রেমিটেন্স বেড়েছে প্রায় ছিয়াত্তর শতাংশ। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হিসেবে দুহাজার তেইশ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এসে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হবে।

আরো পড়ুন:

তবে এই এক বছরে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে শ্রীলংকার শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাত শতাংশ। কৃষি খাতও ভালো করতে শুরু করেছে। বিশেষ চা ও রাবার রপ্তানি বেড়েছে।

এর মধ্যেও সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোন কোন খাতে কর বাড়ানো আবার কোন খাতে ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপও নিতে হয়েছে রনিল বিক্রমা সিংহের সরকারকে। পাশাপাশি সংকট এড়াতে এগিয়ে এসেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কও

চলমান থাকা প্রকল্প গুলো থেকে প্রায় তিনশো পঁচিশ মিলিয়ন ডলার তারা জরুরী প্রয়োজনের খাতে সরিয়ে নেয়। বিশেষ করে ঔষধ, লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস, এলপিজি, সারের মতো পণ্যগুলো যাতে মানুষ সহজে পেতে পারে সেজন্য এমন পদক্ষেপ নেয় সংস্থাটি। এছাড়া বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবেও সংস্থাটি সাতশো মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে শ্রীলংকার সরকারকে।

মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশটি যে ঘুরে দাঁড়াতে পারলো তার কারণ হিসেবে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রিয়াঙ্কা দোনু সিংহ বলছেন সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কিছু নীতি পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে।

এর ফলে রেমিট্যান্স ও পর্যটনের মতো কিছু ক্ষেত্রে অটমেটিক রিকোভারি হয়েছে। এই দুটোর সমন্বয়েই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। রনিল বিক্রমা সিংহ ক্ষমতা গ্রহণের পর কিছু কিছু খাতে সংস্কারের পাশাপাশি IMF এর সাথে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের একটি বেইল আউট প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।

চলতি বছরের মার্চে আইএমএফ বোর্ড সেটি অনুমোদন করে। এরপর খাদ্যমূল্য ও বিদ্যুতের দাম সামান্য কমানোর চেষ্টা করে জনজীবন সহজ করার চেষ্টা করে সরকার এবং তেইশ লাখ অতি দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।

Top Stories BD এর সর্বশেষ ব্রেকিং নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন